শান্তিনিকেতন ভ্রমণ-
শান্তিনিকেতন(Shantiniketan)নামের মধ্যেই রয়েছে শান্তি। শান্তির নীড় হলো শান্তি নিকেতন। এখানে আলাদা শান্তির পরশ পাওয়া যায় মনপ্রান জুড়িয়ে যায়।। পশ্চিম বঙ্গের বীরভূমের বোলপুর শহরের নিকট কোপাই নদী ও অজয় নদের তীরে অবস্থিত শান্তি নিকেতন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজরিত শান্তি নিকেতন যেনো সাহিত্য এবং সংস্কৃতির মেলাবন্ধনের সাক্ষী। বর্তমানে শান্তিনিকেতনকে আরো সমৃদ্ধ করেছে পৌষ মেলা, বসন্ত উৎসব, জয়দেব কেঁদুলির মেলা, ছাতিমতলা, রবীন্দ্র মিউজিয়াম, বল্লভপুর ওয়াইল্ড লাইফ পার্ক, নন্দন আর্ট গ্যালারি, সোনাঝুরি এবং আমারকুটির। শান্তি নিকেতন প্রকৃতি, শিক্ষা এবং সংস্কৃতির সৌন্দর্যে ভ্রমণ পিপাসুদের হৃদয় তৃপ্ত করে চলেছে বছরের পর বছর।।
শান্তিনিকেতন এর দর্শনীয়স্থান
শান্তিনিকেতন ভবন
প্রথম দর্শনীয় স্থান অবশ্যই শান্তিনিকেতন ভবন,যা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তৈরি করেছিলেন। এটি আশ্রমের সর্বপেক্ষা পুরোনো বাড়ি। প্রথমে বাড়িটি একতলা ছিলো পরে দোতলা বাড়ি হয়।এই বাড়িতে তিনি ধ্যানে বসতেন। ব্রম্মচর্য বিদ্যালয় স্থাপনের সময় রবীনদ্রনাথ কিছুকাল সপরিবারে এই বাড়িতে বাস করেছিলেন।
উপসনা মন্দির
এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের জৈষ্ঠ্য পুত্র দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর। বেলজিয়াম কাচের রঙিন কারুকার্যময় নান্দনিক নকশায় নির্মিত এই উপসনা মন্দিরটি স্থানীয় লোকজনের কাছে কাঁচের মন্দির নামে পরিচিত।
উত্তরায়ন
পাঁচটি বাড়ি নিয়ে গড়ে উঠেছে উত্তরায়ন। বাড়িগুলোর নাম হলো- উদয়ন, কোনার্ক,শ্যামলী,পুনশ্চ এবং উদীচী। রবীদ্রনাথের ব্যবহৃত জিনিস পত্র, নোবেল পুরুষ্কারর রেপ্লিকা, বিভিন্ন দেশ থেকে পাওয়া উপহার, বাদ্যযন্ত্র, কলম, সবকিছু উদয়ন বাড়িটিতে সাজানো আছে।
ছাতিমতলা
দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এখানে এক ছাতিমতলায় কিছু ক্ষনের জন্য বিশ্রাম করেন। এখন সেই পুরাতন ছাতিম গাছটি মারা গেছে তার জায়গায় নতুন দুটি ছাতিম গাছ রোপন করা হয়েছে, কিন্তু আজও সেই ছাতিমতলা দর্শনীয় স্থান।
সোনাঝুরি হাট
প্রতি শনিবার সোনাঝুরিতে হাট বসে। এখানে হাতের তৈরি প্রচুর সুন্দর জিনিস পাওয়া যায়। ঘর সাজানোর জিনিস থেকে শুরু করে শাড়ি, গয়না, বেতের বিভিন্ন জিনিস পাওয়া যায়।
তালধ্বজ বাড়ী
উপাসনা মন্দিরের ঠিক উত্তর-পূর্ব কোণে একটি তালগাছকে কেন্দ্র করে একটি গোলাকার খড়ের চালের বাড়ি আছে। এটিকে তালধ্বজ বলা হয়। পূর্বে পাঠভবনের অধ্যাপক শ্রদ্ধেয় তেজেশচন্দ্র সেন মহাশয় এখানে বসবাস করতেন।
বকুলবীথি
ছাতিমতলার ঠিক দক্ষিণ দিকের জায়গাটির নাম বকুলবীথি। এটি পাঠভবন এলাকার মধ্যে অবস্থিত। এখানে অনেক বকুল গাছ রয়েছে। তাই এই জায়গার নাম বকুলবীথি। এখানে প্রত্যেক গাছের নীচে কাঁকর বিছানো ও বেদী করা আছে। এখানে পাঠভবনের ক্লাস হয়। বকুলবীথি ছাড়িয়ে উত্তর দিকে এগোলে বামদিকে বিশ্বভারতীর “উদ্যান বিভাগ”।
তিনপাহাড়
কাঁচ মন্দিরের ঠিক পূর্ব দিকে বিশাল বটগাছ ঘেরা জায়গাটির নাম তিন পাহাড়। শান্তিনিকেতনের প্রথম অবস্থায় এটি একটি পুকুর ছিল। পরবর্তীকালে পুকুরটি বন্ধ করে বাগান তৈরি করা হয়। এখানে মহর্ষির বসবার একটি বেদী ছিল। সূর্যদয়ের সময় মহর্ষি এখানে বসে ধ্যানমগ্ন হতেন।
আম্রকুঞ্জ
শান্তিনিকেতন বাড়ির দক্ষিণে অনেক আমগাছযুক্ত জায়গাটির নাম ‘আম্রকুঞ্জ’। এখানে যে বেদীটি আছে বর্তমানে সেখানেই ‘’বিশ্বভারতীর সমাবর্তন’’ উৎসব অনুষ্ঠিত হয় এবং এই বেদীর আশপাশে কাঁকর বিছানো জায়গাগুলিতে পাঠ ভবনের ক্লাস হয়।
১৯১৩ সালে ১৩ নভেম্বর নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর কোলকাতা থেকে স্পেশাল ট্রেনযোগে বহু গণ্যমান্য ব্যক্তি শান্তিনিকেতনে এসে রবীন্দ্রনাথকে এই আম্রকুঞ্জেই আন্তরিক সম্বর্ধনা ও সম্মান প্রদর্শন করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ কথা সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্ট্যোপাধ্যায় ও সুভাষচন্দ্র বসুকে এই আম্রকুঞ্জে সম্বর্ধনা দেওয়ার ব্যাবস্থা করেছিলেন।
দেহলি (মৃণালিনী আনন্দ পাঠশালা)
আম্রকুঞ্জের ঠিক দক্ষিণ কোণে একটি ছোট্ট দোতলা বাড়ি আছে সেটির নাম দেহলি। বর্তমানে রবীন্দ্রনাথের স্ত্রী মৃণালিনী দেবীর নামানুসারে এটি মৃণালিনী আনন্দ পাঠশালা নামে পরিচিত। দেহলির পাশে যে খড়ের বাড়িটি আছে তাকেই নতুন বাড়ি বলা হয়। নতুন বাড়ির পশ্চিম দিকে একটি খড়ের চালের বাড়ি আছে। সেটি শান্তিনিকেতন আশ্রমের মহিলাদের সমিতির ঘর, তার নাম ‘’আলাপিনী মহিলা সমিতি’।
শালবীথি
মৃণালিনী আনন্দ পাঠশালা ও ছাত্রী নিবাসের মাঝখান দিয়ে যে কাঁকড় বিছানা রাস্তা পশ্চিম দিকে গেছে, দুইদিক শাল গাছ ঘেরা রাস্তাটি ‘’শালবীথি’ নামে পরিচিত।
গৌরমঞ্চ (গৌরপ্রাঙ্গণ)
গৌরপ্রাঙ্গণ মাঠের পশ্চিমদিকে একটি উন্মুক্ত পাকা মঞ্চ প্রায় ৩৫ বছর পূর্বে নির্মিত হয়েছে। একে কেউ কেউ গৌরসক বলে উল্লেখ করেন। এখানে বিশ্বভারতীর বহু অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। বিশেষ উল্লেখযোগ্য এই মঞ্চে বসন্ত উৎসবের সকাল ও সন্ধ্যার অনষ্ঠান ও ২৫শে বৈশাখের সমস্ত অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
পৌষ মেলা
শান্তিনিকেতনের আকর্ষণকে আরো বাড়িয়ে তোলে পৌষ মেলা, বসন্ত উৎসব,জয়দেব কেদুঁলির মেলা। বহু পর্যটকদের সমাগম ঘটে এই উৎসবে। বাংলার সাহিত্য সংস্কৃতির অভূত পূর্ব সমন্নয় ঘটে এই মেলাগুলিতে। পৌষমেলা হয় শীতকালে, এই মেলায় বিভিন্ন প্রাদেশিক নৃত্য, লোকসংগীত, কুটিরশিল্প, হস্তশিল্প, পিঠে পায়েস সব মিলিয়ে তিনদিন সময় যেনো ফুরিয়ে যায়।।
এছাড়া রয়েছে সংগীত ভবন, চিনা ভবন, নিপ্পন ভবন, বাংলাদেশ ভবন, ভাষা ভবন, আম্র কুঞ্জ, কালো বাড়ি, সিংহ সদন, ঘন্টা তলা, মালঞ্চ, শালবিথি, কোপাই নদীর ধারে খোয়াই, প্রভৃতি দর্শনীয়স্থান। সব মিলিয়ে বলা যেতে পারে রোজকার দৌড়ঝাঁপ,মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে চাইলে শান্তিনিকেতন আদর্শ জায়গা। তাই প্রকৃতির ছায়ায় এবং শান্তির নীড়ে কিছুদিন কাটিয়ে আসুন।।
ভ্রমনের সময়
নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পযর্ন্ত শান্তিনিকেতন যাওয়ার উৎকৃষ্ট সময়।
কিভাবে যাবেন
কলকাতা হাওরা থেকে ট্রেনে বোলপুর স্টেশন। এরপর রিকশায় শান্তিনিকেতন। বাসে যেতে হলে ধর্মতলা থেকে বাস ছাড়ে।
কোথায় থাকবেন
থাকার জন্য বিভিন্ন হোটেল লজ,গেস্ট হাউজ ও রিসোর্ট আছে। পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন বিভাগের নিজস্ব হোটেল আছে। এছাড়া রাতের তারা দিনের রবি গেস্ট হাউজ (ফোন নং ৩০৫২২৭৫৫) বসুন্ধরা (ফোন নং ২৬৪৫৩৮) বোলপুর লজ(২৫২৬৬২)।
বি: দ্র : ঘুরতে গিয়ে দয়া করে পরিবেশ নষ্ট করবেন না,চিপস এর প্যাকেট, পানির বোতল এবং অপচনশীল দ্রব্য নির্ধারিত স্হানে ফেলুন।। এই পৃথিবী, আমার, আপনার সুতরাং নিজের দেশ এবং পৃথিবীকে সুন্দর রাখা এবং রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও আমার এবং আপনার হ্যাপি_ট্রাভেলিং
ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ
Comment (0)